WB Primary Teachers Extra Duty: উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ২০২৫ সালের তৃতীয় সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য যে নতুন নিয়মাবলী ঘোষণা করেছে, তা এককথায় যুগান্তকারী বলে মনে করা হচ্ছে। পরীক্ষার রূপ বদলে দিতে চলেছে একাধিক সিদ্ধান্ত। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো: এবার পরীক্ষার পরিদর্শকের ভূমিকায় দেখা যাবে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকরাও। এতদিন এই দায়িত্ব শুধু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্যই সীমিত ছিল। নতুন এই সিদ্ধান্ত বহু শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীর মধ্যেই আলোড়ন তুলেছে।
শিক্ষক ঘাটতির সমাধানে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতির সমস্যা তা আর নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার সময় এই সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। বহু কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় পরীক্ষার সময় গলদ দেখা দিয়ে থাকে, যার প্রভাব পড়ে সুষ্ঠু পরীক্ষা পরিচালনার উপর। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এবার সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের স্থায়ী শিক্ষকদেরও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
এতে করে শুধু শিক্ষক ঘাটতি দূর হবে না, বরং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকরাও প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন বলে একাংশের ধারণা। পাশাপাশি, তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ বাড়বে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় দায়িত্বের জন্য তাদের প্রস্তুত করবে।
নতুন পরীক্ষানীতির মূল পরিবর্তনসমূহ
২০২৫ সালের তৃতীয় সেমিস্টার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এইসব পরিবর্তনের মধ্যে কয়েকটি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. OMR শিটে পরীক্ষা:
এই প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের একটি অংশ OMR শিটের মাধ্যমে নেওয়া হতে চলেছে। এতে করে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ আরও দ্রুত হবে এবং ভুলের সম্ভাবনা অনেক কমে আসবে। এছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি হবে, কারণ OMR পদ্ধতি সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
২. অনলাইন অ্যাডমিট কার্ড:
আগে স্কুল থেকেই অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহ করতে হতো, কিন্তু এখন থেকে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই সংসদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে পারবে। যদি কোনও ছাত্র প্রথম দিনে অ্যাডমিট কার্ড আনতে ভুলে যায়, তাহলে তার পরীক্ষা বাতিলও হবে না। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে।
৩. বর্ষাকালীন বিশেষ ব্যবস্থা:
পরীক্ষাটি বর্ষাকালে অনুষ্ঠিত হওয়ায়, জলবন্দি বা বন্যা কবলিত এলাকার জন্য বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। প্রয়োজনে সেসব কেন্দ্র পরিবর্তন করে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে। প্রশ্নপত্র ও OMR শিট যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
৪. OMR শিট পরিবহনে রদবদল:
এই বর্ষায় বৃষ্টির কারণে আগে যেখানে ট্রেনে করে প্রশ্নপত্র ও শিট পাঠানো হতো, এবার সেগুলি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ক্যাম্প অফিসে গাড়ি করে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে। এতে করে প্রশ্নপত্র বা শিট ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
৫. কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
পরীক্ষা চলাকালীন শৌচাগার ব্যবহার, মোবাইল ফোন বহন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস – এসব নিয়ে নতুন নিয়ম আনা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার সময় শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবে না, তবে কিছু নিয়মে শিথিলতা আনা হয়েছে। যদি কেউ অসদুপায় অবলম্বন করে, তবে তার পুরো পরীক্ষা বাতিল হতে পারে বলে জানা যায় । তবে শুধুমাত্র মোবাইল পাওয়া গেলে আগে পুরো পরীক্ষা বাতিল হতো, এখন তা নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর।
প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য কী কী সুযোগ আসছে?
প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের দীর্ঘদিন ধরেই একটি দাবি ছিল – যাতে তারা উচ্চ মাধ্যমিক বা অন্যান্য বড় পরীক্ষায় পরিদর্শক হিসেবে কাজ করতে পারেন। এই সুযোগ এবার বাস্তবায়িত হলো। এই শিক্ষকরা তাদের নিজস্ব বিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন, যা ভবিষ্যতে প্রমোশন বা প্রশাসনিক চাকরির ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে।
শুধু তাই নয়, এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা অন্যান্য স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হবেন, যা একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হতে চলেছে।
সংসদের লক্ষ্য কী?
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এই পদক্ষেপের পেছনে মূল উদ্দেশ্য:
- স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা: পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিকে আরও স্বচ্ছ এবং নির্ভুল করা ।
- দক্ষতা বৃদ্ধি: শিক্ষকদের নতুন দায়িত্ব দিয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ানো।
- প্রযুক্তি ব্যবহার: পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করা।
- সময়মতো ফলাফল: ফলাফল প্রকাশের সময় কমানো।
শিক্ষার্থীদের করণীয় কী?
এই নতুন নিয়মের আলোকে ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুত থাকতে হবে:
- OMR শিট কীভাবে পূরণ করতে হয় তা জানতে হবে।
- অ্যাডমিট কার্ড অনলাইনে ডাউনলোড করে সময়মতো নিয়ে যেতে হবে।
- মোবাইল বা অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস সম্পূর্ণরূপে দূরে রাখতে হবে।
- নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে।
অভিভাবকদের ভূমিকা
অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের এই নতুন পরীক্ষার নিয়ম সম্পর্কে আগেই সচেতন করে তোলা এবং প্রস্তুত থাকতে উৎসাহিত করা। পরীক্ষার দিনগুলি যেন সুস্থ, নির্বিঘ্ন ও নিয়মমাফিক কাটে, সেজন্য পরিবার থেকেও সহযোগিতা করা অত্যন্ত জরুরি।
২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষা সংসদের এই নতুন নির্দেশিকা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। একদিকে যেমন শিক্ষক ঘাটতির সমাধান হচ্ছে, অন্যদিকে পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বাড়ছে আস্থা।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকরা এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হবেন, যা তাদের জন্য একটি বড় দায়িত্ব ও সুযোগ। একইসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের জন্যও পরীক্ষার প্রক্রিয়া সহজতর ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই এই পরিবর্তন গুলি শুধু পরীক্ষা নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।