অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি নেই! রাজ্যের কর্মীদের নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত – WB Government Cancel Holyday

 

WB Government Cancel Holyday:  পশ্চিমবঙ্গে চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টির কারণে শহর কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে থাকার সমস্যা তীব্রতর হয়েছে। এরই মধ্যে কলকাতা পুরসভা (KMC) এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে—যেখানে জানানো হয়েছে, পুরসভার নিকাশি বিভাগের কর্মীদের ছুটি অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে।

 ইনট্রো ১: টানা বৃষ্টির জেরে জরুরি সতর্কতা

এই বছর বর্ষা অনেক আগেই নিজের রূপ দেখাতে শুরু করেছে। জুনের শেষ থেকেই শহরে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। কোথাও ভারী, কোথাও আবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ফলে, কলকাতার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে বারবার। জল নামতে সময় লাগছে, আবার বৃষ্টির তীব্রতা বাড়লেই পুনরায় জল জমে যাচ্ছে শহরের বুকজুড়ে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কড়া সিদ্ধান্ত—নিকাশি বিভাগের সমস্ত কর্মীর ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে অক্টোবর পর্যন্ত।

📌 ইনট্রো ২: উৎসবের মরসুম ও জরুরি পরিষেবা নিশ্চিতকরণ

এবার দুর্গাপুজো সময়ের আগেই সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে। একে একে দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটা, তারপর ছটপুজো—অর্থাৎ টানা উৎসবের সিজন শহরে। এই সময় বৃষ্টির প্রভাবে যাতে শহরবাসীকে অস্বস্তিতে পড়তে না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই পুরসভার এই পদক্ষেপ। এমনিতেই নিকাশি বিভাগ জরুরি পরিষেবা (Essential Services) হিসেবে বিবেচিত, তাই বৃষ্টি হলে তারা যেন সর্বদা প্রস্তুত থাকে, সেই ব্যবস্থা রাখতে চাইছে পুরসভা।

 কলকাতায় বর্ষার প্রভাব কতটা ভয়াবহ?

এই বর্ষায় কলকাতায় দিনরাত বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ভারী বৃষ্টি তো কখনও হালকা। কখনও আবার একটানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি চলেছে। এর ফলে অনেক এলাকায় জল জমে গেছে, রাস্তায় যান চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বেহালা, ঠাকুরপুকুর, কাশীপুর, জোড়াসাঁকো, পার্কসার্কাস, গার্ডেনরিচ-সহ বহু এলাকা এখনও জল নিকাশির দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

গত কিছুদিনে সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার জল জমে থাকা রাস্তার ছবি উঠে এসেছে। বিশেষ করে রাতের বেলা ভারী বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে জল জমে যাওয়ায় অনেক পরিবার সমস্যায় পড়েছেন। এই সমস্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই কলকাতা পুরসভার এই বড় সিদ্ধান্ত।

 মেয়রের বক্তব্য: “এটি মানুষের স্বার্থে”

কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “জল যাতে না জমে এবং দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যায়, তার জন্যই ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিকাশি বিভাগ জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে, তাই তাদের কাজ চলতে হবে টানা।” তিনি আরও বলেন, “আমরা তিন-চার দিন সময় পেলে শহরের রাস্তা ঠিক করে ফেলতে পারব। রাস্তার নিচের অবস্থা অনেক খারাপ, তাই সমস্ত জায়গায় ঢালাই রাস্তা সম্ভব নয়।”

অক্টোবর পর্যন্ত কেন?

👉 প্রথমত, বর্ষা শেষ হতে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে সাধারণত।
👉 দ্বিতীয়ত, দুর্গাপুজো শুরু হচ্ছে সেপ্টেম্বরে, চলবে অক্টোবর পর্যন্ত।
👉 তৃতীয়ত, ছটপুজো—একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব—ঘিরে থাকে অক্টোবরে।
👉 চতুর্থত, এই সময় শহরে মানুষজনের যাতায়াত বেড়ে যায়, বাইরে বেরোনো বাড়ে, ফলে রাস্তায় জল জমলে ভোগান্তি বাড়বে।

এই কারণেই নিকাশি বিভাগের ছুটি অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে।

কোন কর্মীরা এই সিদ্ধান্তের আওতায়?

  • কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের কর্মীরা
  • জল সরবরাহ ও ড্রেনেজ কর্মীরা
  • জলপাইপ মেরামতির জরুরি টিম
  • বৃষ্টির সময় রাস্তায় জল সাফাই ও নিষ্কাশন টিম

 ছুটি বাতিল মানেই কি কর্মীদের অসুবিধা?

একদিকে, ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তে অনেক কর্মী অখুশি। তাঁরা বলেন, “আমরাও তো মানুষ। আমরাও উৎসব করতে চাই। পরিবার নিয়ে একটু সময় কাটাতে চাই।” কিন্তু আবার কেউ কেউ বলছেন, “সাধারণ মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে, সেটাই বড় কথা। আমরা সরকারের নির্দেশ মেনে কাজ করব।”

 শহরের কোন এলাকাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ?

  • বেহালা
  • ঠাকুরপুকুর
  • টালিগঞ্জ
  • পার্কসার্কাস
  • গার্ডেনরিচ
  • নিউ আলিপুরের কিছু অংশ

এই সমস্ত জায়গায় অতীতেও বৃষ্টির পর জল জমে থাকার রেকর্ড রয়েছে। সেখানেই প্রথমে নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে KMC।

পুরসভার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, আগামী দিনে নিচু এলাকাগুলিতে উন্নত প্রযুক্তিতে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পাম্প বসানো হবে, জল নিষ্কাশনের জন্য রাউন্ড দ্য ক্লক টিম কাজ করবে। নাগরিকদের কাছেও অনুরোধ রাখা হয়েছে, বৃষ্টির সময় প্লাস্টিক-সহ কোনও আবর্জনা ড্রেনে ফেলা না হয়।

 জনসচেতনতা এবং নাগরিক ভূমিকা

একমাত্র পুরসভা নয়, নাগরিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে শহরকে জলমুক্ত রাখতে। যদি প্রতিটি পরিবার ডাস্টবিন ব্যবহার করে, রাস্তায় প্লাস্টিক না ফেলে, তাহলে ড্রেন বন্ধ হবে না, জল নামবে দ্রুত।

পুরসভার এই সাহসী সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দেয়, তাঁরা জনগণের অসুবিধার কথা ভেবে আগাম প্রস্তুতি নিতে প্রস্তুত। যদিও কিছু কর্মীর জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থেই এই উদ্যোগ। এখন দেখা যাক, শহর কতটা জলমুক্ত রাখা যায় এই বর্ষা এবং উৎসবের মরসুমে।

Leave a Comment