কলকাতা হাইকোর্ট ফের বড় পদক্ষেপ নিল ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নিয়ে চলা বিতর্কিত মামলায়। একের পর এক নতুন নতুন মামলা হচ্ছে যেন এই মামলা শেষ হওয়ারই নয়। সম্প্রতি আদালত রাজ্য সরকার, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, এবং সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের (WBSSC) কাছ থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলফনামা ও নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে, যার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ জুলাই, ২০২৫। এর ফলে রাজ্য জুড়ে SSC চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে আশা ও উদ্বেগ দুই-ই বেড়ে গিয়েছে।

আদালতের নির্দেশ: কোন কোন তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে?

কলকাতা হাইকোর্ট সরাসরি তিনটি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে যে, তারা সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হলফনামার একটি করে অনুলিপি হাইকোর্টে জমা দিক। এই হলফনামাগুলি মূলত সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হয়েছিল ৩ এপ্রিল ২০২৫-এর রায়ের প্রেক্ষিতে এবং পরে ১৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আদালতের পক্ষ থেকে একটি চূড়ান্ত নির্দেশ জারি করা হয়।

এই নির্দেশের মূল বিষয় ছিল:

  • নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি (SLST-II) জমা দেওয়া
  • সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সূচী
  • বিজ্ঞাপনের খসড়া
  • এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে চূড়ান্তভাবে প্রক্রিয়া শেষ করার রূপরেখা

কোন মামলার প্রেক্ষাপটে এই আদেশ?

এই ঘটনাপ্রবাহ মূলত WBSSC ২০১৬ মামলার ধারাবাহিকতায় ঘটছে, যেখানে প্রথম SLST পরীক্ষায় বহু অনিয়ম, নকল মেধাতালিকা, অযোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ–এসব অভিযোগ উঠে এসেছিল। সেই মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ইতিমধ্যে এসব প্রেম করো এবং হাইকোর্টের তরফ থেকে একের পর এক বড় বড় রায় দেওয়া হয়েছে এবং সর্বশেষ রায় হয়েছে অবৈধ চাকরিপ্রার্থীরা যেন কোনভাবেই এই চাকরির পরীক্ষায় আবেদন জানাতে না পারে।

এর মাঝে WBSSC দ্বিতীয় দফার SLST (SLST-II) নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু অনেক প্রার্থী প্রশ্ন তোলেন:

❝ এই নতুন SLST প্রক্রিয়া কী আদৌ আদালতের নির্দেশ মেনে চলছে? ❞

এক্ষেত্রে এই তথ্যগুলো বিচার করেই আদালত পরবর্তী রায় দেবে।

হাইকোর্টের উদ্দেশ্য কী?

এই তথ্য তলবের মূল উদ্দেশ্য হলো:

  • সুপ্রিম কোর্টে যেসব তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলি সত্যি কি না যাচাই করা
  • WBSSC-এর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও সময়সূচীর মধ্যে কোন রকম বিভ্রান্তি বা অসঙ্গতি আছে কি না দেখানো
  • নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রাখা, যাতে ভবিষ্যতে আরও আইনি জটিলতা তৈরি না হয়

রাজ্যের তরফ থেকে দাখিল করা Miscellaneous Application No. 709/2025 অনুযায়ী, পর্ষদ একটি ব্যাখ্যা দেয় সুপ্রিম কোর্টে, যা এখন হাইকোর্টের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সুপ্রিম কোর্টের ১৭ এপ্রিলের আদেশের তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—

৩১ মে ২০২৫-এর মধ্যে রাজ্য সরকার ও WBSSC-কে অবশ্যই নতুন নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ও সময়সূচী জমা দিতে হবে।

এর মানে, SLST-II প্রক্রিয়া যদি এই সময়সীমা মেনে শুরু না হয়ে থাকে বা অন্য কোনও অনিয়ম থাকে, তাহলে আদালত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। তাই, হাইকোর্ট এই অনুচ্ছেদকে কেন্দ্র করেই বর্তমান নির্দেশ দিয়েছে।

পরবর্তী শুনানি: ১৪ জুলাই ২০২৫

এই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে ১৪ জুলাই। সেইদিনে:

  • রাজ্য, পর্ষদ ও WBSSC আদালতের কাছে দাখিল করবে হলফনামা ও কাগজপত্র
  • আদালত বিচার করবে এই তথ্য সত্যতা বহন করে কি না
  • এবং সেই অনুযায়ী মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে

চাকরিপ্রার্থীদের মতে, এই রায় একদিকে যেমন নিয়োগের নতুন দিশা দেখাবে, তেমনই পূর্ববর্তী অনিয়মের বিচার পাওয়ারও সুযোগ তৈরি করবে।

চাকরিপ্রার্থীদের উদ্বেগ ও আশা

২০১৬ SSC পরীক্ষার পর থেকেই বহু প্রার্থী নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কেউ হয়তো মেধা তালিকায় নাম পেয়েও চাকরি পাননি, আবার অনেক অযোগ্য প্রার্থী প্রভাব খাটিয়ে চাকরি পেয়েছেন—এই অভিযোগ বহুবার প্রমাণিত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে:

  • SLST-II নিয়োগ যদি আবারও অস্বচ্ছ হয়, তাহলে পুরনো অনিয়মের প্রতিকার হবে না
  • আবার, নতুন SLST যথাযথ নিয়মে চললে হাজার হাজার প্রার্থীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে

তাই, হাইকোর্টের ১৪ জুলাইয়ের শুনানিকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে বাড়ছে চাকরিপ্রার্থীদের চাপা উত্তেজনা ও প্রত্যাশা

সারসংক্ষেপ: কী কী বিষয় নজরে রাখবেন

বিষয়বিস্তারিত
মামলার নামWBSSC 2016 নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা
আদালতকলকাতা হাইকোর্ট
চাওয়া হয়েছেসুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হলফনামা ও SLST-II সংক্রান্ত কাগজপত্র
সময়সীমা১৪ জুলাই ২০২৫
উদ্দেশ্যনিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়েছে কি না তা যাচাই
সম্ভাব্য ফলমামলার ভবিষ্যৎ গতি ও নতুন নিয়োগের রূপরেখা নির্ধারণ

SSC ২০১৬ মামলা নিয়ে বহুদিন ধরেই চলছিল জটিলতা। এবার সেই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দিকেই এগোচ্ছে হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী WBSSC এবং রাজ্য সরকার যদি যথাযথ নথিপত্র পেশ করতে না পারে, তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠবে।

অন্যদিকে, যথাযথ তথ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করলে, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে আবারও স্বচ্ছতা ও আস্থার পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।

By BT SOLUTIONS

BT SOLUTIONS IS AN ONLINE TECH NEWS WEBSITE.IN THIS PORTAL WE REGULARLY UPDATES TECH RELATED ANY ARTICLES.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *