ভারত সরকারের নতুন পদক্ষেপে দেশজুড়ে রেশন কার্ডধারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চরম উদ্বেগ। ২০২৫ সালে রেশন বিতরণ ব্যবস্থাকে আরো স্বচ্ছ এবং ডিজিটাল করতে কেন্দ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে, যার ফলে এখন থেকে ই-কেওয়াইসি (e-KYC) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সমস্ত রেশন কার্ডের সঙ্গে। সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, যাদের রেশন কার্ডে এখনো পর্যন্ত আধার সংযুক্ত করে ই-কেওয়াইসি করা হয়নি, তাদের নাম শীঘ্রই রেশন তালিকা থেকে বাতিল হয়ে যেতে পারে।
এই খবরে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ রেশন কার্ডধারীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, সরকার এবার রেশন কার্ডের প্রকৃত সুবিধাভোগীদের যাচাই করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভূয়ো কার্ড এবং অযোগ্য সুবিধাভোগীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তালিকা থেকে। তাই এই মুহূর্তে সঠিকভাবে ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করা আপনার দায়িত্ব, যাতে আপনি ও আপনার পরিবার সরকারি রেশন ব্যবস্থার আওতায় থাকেন।
ই-কেওয়াইসি বাধ্যতামূলক কেন? জানুন মূল কারণ
রেশন কার্ড ভারতের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র। এই কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে চাল, গম, কেরোসিনসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে রেশন ব্যবস্থায় জালিয়াতি এবং অনিয়মের ঘটনা ক্রমশ বাড়তে থাকায়, সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
সরকারের মতে, একাধিক ব্যক্তি একাধিক নামে বা জাল তথ্য দিয়ে রেশন কার্ড তৈরি করে, যার ফলে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হন। এসব প্রতারণা রুখতেই আধার কার্ড লিঙ্ক করে ই-কেওয়াইসি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে শুধুমাত্র যোগ্য নাগরিকদের কাছেই রেশন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
ই-কেওয়াইসি না করলে ভবিষ্যতে রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় (inactive) হয়ে যেতে পারে এবং একবার বাতিল হলে পুনরায় সক্রিয় করা বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
কারা কারা ই-কেওয়াইসি না করলে সমস্যায় পড়বেন?
যদি আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ এখনো পর্যন্ত রেশন কার্ডে আধার নম্বর সংযুক্ত করে ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন না করে থাকেন, তাহলে এই নির্দেশিকা সরাসরি আপনাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিশেষ করে যারা NFSA (National Food Security Act) বা রাজ্য খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের অধীনে বিনামূল্যে বা কম দামে রেশন পাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।
অনেকেই মনে করেন, একবার রেশন কার্ড বানিয়ে রাখলেই চিরকাল রেশন সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। রেশন কার্ডও একটি জীবিত ডাটাবেস, যার মধ্যে নির্ধারিত সময়ে হালনাগাদ না হলে বা ভেরিফিকেশন না থাকলে তা বাতিল হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে করবেন রেশন কার্ডের ই-কেওয়াইসি? (দুটি উপায়)
আপনার সুবিধার্থে সরকার ই-কেওয়াইসি করার জন্য দুটি পদ্ধতির সুযোগ রেখেছে – অনলাইন এবং অফলাইন। আপনার যেটি সহজ মনে হবে, সেটি বেছে নিতে পারেন।
✅ অফলাইন পদ্ধতি: নিকটস্থ রেশন ডিলারের মাধ্যমে ই-কেওয়াইসি
- প্রথমে আপনার নিকটবর্তী রেশন ডিলারের দোকানে যান।
- সঙ্গে নিয়ে যান আপনার আধার কার্ড এবং রেশন কার্ডের ফটোকপি।
- ডিলার একটি বায়োমেট্রিক যন্ত্রের সাহায্যে আপনার আঙুলের ছাপ (Fingerprint) নিয়ে ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করবেন।
- ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে তা রেকর্ডে আপডেট হয়ে যাবে।
বিশেষ তথ্য: যাদের আঙুলের ছাপ মিলছে না বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, তারা খাদ্য দপ্তরের নির্ধারিত হেল্প ডেস্ক বা FPS অফিসে গিয়ে ম্যানুয়াল ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
✅ অনলাইন পদ্ধতি: খাদ্য দপ্তরের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ই-কেওয়াইসি
- রাজ্য খাদ্য দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান (যেমন: food.wb.gov.in বা রাজ্যভেদে নির্ধারিত URL)।
- সেখানে “Ration Card e-KYC” বা অনুরূপ লিঙ্কে ক্লিক করুন।
- রেশন কার্ড নম্বর এবং আধার নম্বর প্রদান করুন।
- আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে একটি OTP আসবে।
- OTP দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন।
এই প্রক্রিয়াটি খুব সহজ এবং ঘরে বসেই মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে করা যায়।
ই-কেওয়াইসি করার শেষ তারিখ কবে?
সরকার ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন না করলে রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় হতে পারে। যদিও সব রাজ্যে এই সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে, বেশিরভাগ রাজ্যে এটি ৩১ অগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, শেষ তারিখ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে যত শীঘ্র সম্ভব কাজটি সম্পন্ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ই-কেওয়াইসি না করলে কী হবে?
- আপনার নাম রেশন তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে
- মাসিক রেশন প্রাপ্যতা বন্ধ হয়ে যাবে
- ভবিষ্যতে নতুন করে আবেদন করলেও অসুবিধা হবে
- পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রেশনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে
- সরকারি অন্যান্য সুবিধাও প্রভাবিত হতে পারে (যেমন: PMGKAY, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প)
সরকারের উদ্দেশ্য কী এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে?
সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলত তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে:
- স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: রেশন ব্যবস্থায় জালিয়াতি ও ফাঁকি রোধ করতে
- যোগ্যতা যাচাই: প্রকৃত সুবিধাভোগীদের হাতে রেশন পৌঁছে দিতে
- ডিজিটাল ইন্ডিয়া গঠনে সহায়তা: তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রেশন ব্যবস্থাকে আধুনিক করা
আপনার করণীয় কী?
এই মুহূর্তে আপনাকে অবশ্যই যাচাই করতে হবে আপনার রেশন কার্ডে ই-কেওয়াইসি করা হয়েছে কিনা। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে নিকটবর্তী রেশন দোকানে যান বা অনলাইনে এই কাজটি সেরে ফেলুন। মনে রাখবেন, আপনি এই সুযোগটি যত দেরি করবেন, তত বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন রেশন কার্ড বাতিল হওয়ার।
✅ গুরুত্বপূর্ণ টিপস (Google SEO Friendly Content Enrichment)
- আধার কার্ডে যদি মোবাইল নম্বর যুক্ত না থাকে, আগে সেটি সংশোধন করুন।
- রেশন কার্ডে যদি ভুল তথ্য থাকে (নাম, ঠিকানা, সদস্য সংখ্যা), ই-কেওয়াইসি করার আগে তা সংশোধন করিয়ে নিন।
- যেসব এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দুর্বল, তারা অফলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
- একাধিক রেশন কার্ড থাকলে বা সন্দেহ থাকলে সেটি বাতিল করুন।
- Ration Card e-KYC Last Date 2025
- WB Ration Card Update
- Ration Card Cancel News
- How to do Ration Card eKYC Online
- Ration Card Aadhaar Link News
- Ration Card Verification Process
- Ration Card KYC Required or Not
- Digital Ration Card Update
বর্তমান রেশন ব্যবস্থা ডিজিটাল এবং স্বচ্ছ করার জন্য ভারত সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। ই-কেওয়াইসি বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রকৃত সুবিধাভোগীরা নিশ্চিত হবেন, অন্যদিকে রেশন ব্যবস্থার অপব্যবহারও রোধ হবে। তাই আপনি যদি এখনো ই-কেওয়াইসি না করে থাকেন, তাহলে আর দেরি না করে আজই কাজটি সম্পন্ন করুন।
আপনার রেশন কার্ডের ভবিষ্যৎ এখন আপনার হাতেই।