Primary TET Case 2025: সুপ্রিম কোর্টে আবেদন খারিজ, বিপাকে পড়লেন হাজার হাজার NIOS-D.El.Ed. প্রার্থী

পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চলমান উত্তেজনার মাঝে, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত (Supreme Court) একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যা একদিকে যেমন প্রশাসনিক কঠোরতার বার্তা দেয়, তেমনি হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীকে ফেলেছে অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি।

এই মামলাটি মূলত ছিল NIOS-D.El.Ed. কোর্স করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে, যারা পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (WBBPE) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েও নিজেদের নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন। সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি খারিজ করে দেওয়ায়, এই প্রার্থীদের জন্য চাকরির রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেল বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিক্ষক নিয়োগ ও নথি যাচাই বিতর্ক

২০২৪ সালের শেষভাগে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে আবেদনকারীদের একটি নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী ১২ ধরনের নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বহু NIOS-D.El.Ed. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরা জানান, তাঁদের পক্ষে একসাথে এই সমস্ত নথি জোগাড় করা সম্ভব নয়।

NIOS (National Institute of Open Schooling)-এর অধীনে D.El.Ed. (Diploma in Elementary Education) প্রশিক্ষণ নেয়া হাজার হাজার প্রার্থী দাবি করেন, পর্ষদের শর্তগুলি অযৌক্তিক এবং বাস্তব সম্মত নয়। কারণ NIOS থেকেই প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ও প্রশিক্ষণ অনেক সময়ে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।

এই অবস্থায়, একটি বড় অংশ আবেদনকারী প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্ট এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে যান যাতে কিছু ছাড় পাওয়া যায়। তাঁদের দাবি ছিল, সকল নথি একসাথে না থাকলেও বিকল্প নথির মাধ্যমে যাচাই করেই নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক।

সুপ্রিম কোর্ট কী বলল? আবেদন কেন খারিজ হলো?

২০২৫ সালের ২০ জুলাই, ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিকালে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, নথি যাচাই ছাড়া কোনো প্রকার নিয়োগ কার্যক্রম আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। বিচারপতি বলেন:

“নিয়োগ একটি দায়িত্বপূর্ণ ও আইনী প্রক্রিয়া। এখানে কোনোরকম যাচাই ব্যতীত অথবা তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়।”

শেষ পর্যন্ত, মামলাটিকে “Dismissed as Withdrawn” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মানে, আদালত হয়তো আবেদনকারীদের নিজেদের মামলা প্রত্যাহার করতে বলে, নতুবা আদালত নিজে তা খারিজ করে দেয়।

আবেদনকারীদের হতাশা: NIOS-D.El.Ed. প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে

এই রায়ের ফলে, সমস্ত NIOS-D.El.Ed. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী ১২টি নির্দিষ্ট নথি জমা দিতেই হবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • প্রশিক্ষণের সনদ
  • নাম সংশোধনের প্রমাণ
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি
  • জন্মসনদ
  • আধার / ভোটার কার্ড
  • জাতিগত শংসাপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সময়কাল সংক্রান্ত নথি
  • রেজাল্ট শীট ইত্যাদি

একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৯৯% NIOS-D.El.Ed. প্রার্থীই এই সমস্ত নথি সম্পূর্ণভাবে জমা দিতে অক্ষম। কারণ অনেকেই খণ্ডকালীন বা অন্য রাজ্য থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আবার NIOS-এর কিছু কোর্সের ক্ষেত্রে ব্যাচ অনুযায়ী ডকুমেন্ট ভ্যারিয়েশনও দেখা গেছে।

ফলে, এদের অধিকাংশই নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি তাঁদের কাছে শুধু পেশাগত নয়, এক গভীর মানসিক সংকটও বয়ে এনেছে।

প্রভাব বিশ্লেষণ: এই রায় কীভাবে বদলে দিল হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর স্বপ্ন?

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রায় ১.৫ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে বিশাল একটা অংশ ছিল NIOS-D.El.Ed. কোর্সধারী। এই রায় তাদের জন্য কার্যত একটি চূড়ান্ত ধাক্কা

  • নিয়োগ তালিকা থেকে বাইরে চলে যেতে পারে হাজার হাজার প্রার্থী।
  • আদালতের রায়ের ফলে কোনো আপিল বা পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।
  • নিয়োগের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে পুনরায় প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, যা সময় ও অর্থসাপেক্ষ।
  • অনেক প্রার্থী ইতিমধ্যে চাকরির আশায় অন্য চাকরি কিংবা প্রস্তুতি ছেড়ে দিয়েছেন।

অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলনের হুমকি

রায় প্রকাশের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ও বিভিন্ন কর্মচারী ফোরামে ক্ষোভের ঝড় উঠে যায়। অনেকেই বলেন, এটি একটি ‘বঞ্চনা ও বৈষম্যের রায়’। NIOS-D.El.Ed. হচ্ছে কেন্দ্র সরকার অনুমোদিত কোর্স, অথচ রাজ্য স্তরে এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়োগ থেকে বাদ দেওয়া অন্যায্য।

“আমরা দুই বছর ধরে D.El.Ed. ট্রেনিং নিয়েছি। সেই সময়ে সরকার বলেছিল এই কোর্স গ্রহণযোগ্য। এখন চাকরি দেওয়ার সময় বলা হচ্ছে, আমাদের কাগজপত্র ঠিক নেই!” — অভিযোগ করেন এক চাকরি প্রত্যাশী।

কিছু প্রার্থী ইতিমধ্যে ফের আইনি লড়াইয়ের কথা ভাবছেন, আবার কেউ কেউ রাজপথে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিশেষ করে NIOS ব্যাচ-২০১৭ ও ২০১৯-এর মধ্যে উত্তীর্ণরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

 রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া না এলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই রায়কে হাতিয়ার করে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তাঁদের মতে, প্রশিক্ষণের সময় সরকার সমর্থন দিয়েছিল, কিন্তু এখন সে প্রশিক্ষণকেই অগ্রহণযোগ্য বলা হচ্ছে — এটি দ্বিচারিতা।

শিক্ষা, আইনি কাঠামো ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্ব

NIOS-D.El.Ed. মামলার রায় শুধু একটি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নয়, এটি একটি বৃহত্তর প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে — “সরকারি নীতির স্থায়িত্ব কোথায়?”

প্রশিক্ষণের সময় যারা কোর্স গ্রহণ করেছেন, তাদের কোন অপরাধে আজ চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে হবে? এর উত্তর নেই। আদালত তার আইনি অবস্থানে সঠিক থাকলেও, সমাজের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের কাছে এটি এক ভয়াবহ বার্তা।

প্রশ্ন ১: NIOS-D.El.Ed. কোর্স কি সরকার অনুমোদিত?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি কেন্দ্র সরকার কর্তৃক স্বীকৃত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।

প্রশ্ন ২: সুপ্রিম কোর্ট কেন মামলা খারিজ করল?
উত্তর: আদালতের মতে, নথি যাচাই ছাড়া কোনো প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া আইনত সঠিক নয়।

প্রশ্ন ৩: প্রার্থীরা এখন কী করতে পারেন?
উত্তর: নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য সমস্ত নথি প্রস্তুত করতে হবে অথবা আইনি বা গণতান্ত্রিক পথে ফের দাবি তুলতে পারেন।

Leave a Comment