WB DA Arrear New Update: দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে অপেক্ষার পর অবশেষে সরকারি কর্মীরা রাজ্য সরকারের উপর ক্ষেপে গিয়ে তুলোধোনা দিলো। রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ জানান রাজ্য সরকার তাদের বকেয়া দিয়ে নামাতে পারলে রাজ্যকে দেউলিয়া করে দেবে। যদিও বেশ কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট করতে ২৫ শতাংশ বকেয়া দিয়ে মেটানোর দিন ঠিক করে দেন রাজ্যকে, কিন্তু তারপরেও রাজ্য সরকারের কোন হেলদোল নেই। এর পরিপেক্ষিতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ এমনটাই রাজ্য সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলে দিলেন। তবে যদদও চারঠা রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য বড়দিন হতে চলেছে। আসুন এই প্রতিবেদনে আরো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক
রাজ্য সরকারি কর্মীদের বহুদিনের দাবি বকেয়া ডিএ
রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন, তাঁদের প্রাপ্য মহার্ঘভাতা বা ডিএ কেন্দ্রীয় হারে দিতে হবে। বর্তমানে কেন্দ্রের কর্মীরা যেখানে প্রায় ৪২ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা পান মাত্র ৩ শতাংশ। এই বিশাল পার্থক্য তাঁদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর উত্তাল পরিস্থিতি
এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয় যখন ২০২৫ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে জানায়, রাজ্য সরকারকে অবশ্যই বকেয়া ডিএর ২৫ শতাংশ কর্মচারীদের মিটিয়ে দিতে হবে। এই নির্দেশ কার্যকর করার সময়সীমা ছিল ২৭ জুন। এই রায় প্রকাশ্যে আসার পর কর্মচারীরা আশায় বুক বাঁধেন, তাঁরা অবশেষে তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য পেতে চলেছেন।
জুন পেরিয়ে গেলেও বকেয়া মেটায়নি রাজ্য
কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই নির্দেশ মান্য করেনি। বরং সুপ্রিম কোর্টে তারা রিভিউ পিটিশন দাখিল করে জানায়, তাদের কাছে এই অর্থ মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বাজেট নেই। রাজ্য আরও দাবি করেছে, পুরো বিষয়টির জন্য তাদের কমপক্ষে ছয় মাস সময় দেওয়া হোক। ফলে এই আশাভঙ্গ কর্মীদের মধ্যে বিরাট ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
আন্দোলনে নামছে একাধিক সংগঠন
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’, ‘সরকারি কর্মচারী পরিষদ’, এবং অন্যান্য সংগঠনগুলি একজোট হয়ে ‘নবান্ন চলো’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তাঁদের দাবি, যদি রাজ্য সরকার ডিএ দিতে না পারে, তাহলে তাদের নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে সরে দাঁড়ানো উচিত।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার অজুহাত তুলে সময় নিচ্ছে রাজ্য
নবান্নের তরফে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান অর্থবর্ষে ডিএ দেওয়ার জন্য যে বিশাল বাজেট প্রয়োজন, তা রাজ্যের আয়-ব্যয়ের নিরিখে সম্ভব নয়। রাজ্য আরও দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় সরকার যদি বকেয়া ট্যাক্স ও প্রাপ্য বরাদ্দ মিটিয়ে দিত, তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কিন্তু এই যুক্তি সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলিকে মোটেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
বিরোধীদের তোপের মুখে তৃণমূল সরকার
রাজ্য সরকারের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সরকার কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কর্মচারীদের প্রতি এমন অবহেলা একদিকে যেমন আইনবিরোধী, অন্যদিকে তা জনবিরোধীও বটে।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে কী হতে পারে?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করা সংবিধান পরিপন্থী। এমন ক্ষেত্রে আদালত অবমাননার মামলা চলতে পারে রাজ্যের বিরুদ্ধে। আদালত চাইলেই রাজ্যের শীর্ষ আমলাদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে এবং প্রয়োজনে কড়া শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিতে পারে।
রাজ্য বনাম কেন্দ্র: রাজনীতির তীব্র উত্তাপ
এই পুরো ঘটনায় কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের আর্থিক সংকটে ফেলেছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজ্য নিজের ভুল হিসেব, অপচয় এবং দুর্নীতির জেরে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
বকেয়া ডিএ কর্মীদের কতটা দরকার?
বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ডিএর মতো অর্থনৈতিক সাপোর্ট রাজ্য কর্মচারীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। কেউ চিকিৎসার খরচে হিমশিম খাচ্ছেন, কেউ সন্তানদের শিক্ষার খরচ মেটাতে পারছেন না। অনেকেই মাসের শেষে ব্যক্তিগত ঋণের সাহায্য নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এবার সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিলেন মলয় মুখোপাধ্যায়
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অন্যতম সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকার যদি আমাদের প্রাপ্য ডিএ দিতে না পারে, তাহলে তার অর্থ তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমাদের সঙ্গে এই অবিচার চলতে দেওয়া যাবে না।” তিনি আরও জানান, এবার রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতি, রেল রোকো, নবান্ন অভিযানের মতো বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে এগোবে কর্মচারী সমাজ।
এক মাসে কতটা ক্ষতি রাজ্য কর্মচারীদের?
অনুমান করা হচ্ছে, রাজ্যের প্রায় ১০ লক্ষ কর্মচারীর মধ্যে প্রতি জন গড়ে অন্তত ৮০০০-১০০০০ টাকা করে ডিএ পাননি। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে কর্মচারীদের। এই টাকা তাঁদের সঞ্চয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এমনকি পরিবারের দৈনন্দিন জীবনেও বড় ধাক্কা দিচ্ছে।
প্রাক্তন অর্থসচিবদের মতে কী করা উচিত?
প্রাক্তন অর্থসচিবদের মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের উচিত স্বল্পমেয়াদি বন্ড বা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করা। প্রয়োজন হলে প্রশাসনিক খরচ কমিয়ে ডিএ মেটানো উচিত। না হলে এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, এক সামাজিক সমস্যাতেও রূপ নেবে।
মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কী বার্তা?
এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে অর্থ দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন, এবং রাজ্য সরকার আদালতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল।
রাজ্য বাজেটে এই টাকার সংস্থান সম্ভব?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজ্য যদি অপ্রয়োজনীয় কিছু প্রকল্প কমিয়ে দেয় বা কিছু সামাজিক স্কিমে ব্যয় সংযম আনে, তাহলে ডিএ দেওয়ার মতো বাজেট সংস্থান সম্ভব। কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।
সামনের লোকসভা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে এই ইস্যু
এই ইস্যুর রাজনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সরকারি কর্মচারীরা সমাজের এক প্রভাবশালী অংশ এবং তাঁদের অসন্তোষ সরাসরি আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিফলিত হতে পারে। তাই অনেকেই মনে করছেন, এখনই সিদ্ধান্ত না নিলে সরকারকে তার রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে।
বকেয়া ডিএ শুধুই একটি অর্থনৈতিক দাবি নয়, এটি একটি সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কাছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর না হলে রাজ্যের প্রশাসনিক মর্যাদা, কর্মচারীদের আস্থা এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ— সবকিছুই প্রশ্নের মুখে পড়বে। এখন দেখার, রাজ্য সরকার শেষ মুহূর্তে কী সিদ্ধান্ত নেয়।