Da Case Update: ডিএ মামলায় প্রতারণার অভিযোগ! অন্য রাজ্য পারলে বাংলা কেন পারছে না? কনফেডারেশনের কড়া জবাব

রাজ্যে DA মামলা নিয়ে আবারও বড়সড় তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে আবারো বহু প্রতীক্ষিত ডিএ (মহার্ঘ ভাতা) মামলার আপডেট নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের মধ্যে আইনি লড়াই এখন তুঙ্গে। সুপ্রিম কোর্টের ৪ আগস্টের শুনানিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ও আশার পারদ একসঙ্গে চড়ছে।

রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক মডিফিকেশন পিটিশন এবং সুপ্রিম কোর্টে করা নতুন আবেদনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কনফেডারেশন। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো একটি “প্রতারণার ফাঁদ”, এবং তারা আইনি দিক থেকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে চলেছে। রাজ্য সরকারের কর্মীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন।

কনফেডারেশনের অভিযোগ: প্রতারণার পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার?

কনফেডারেশনের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বারবার নতুন নতুন আইনি কৌশল ব্যবহার করে ডিএ মামলাকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের মতে, সম্প্রতি করা মডিফিকেশন পিটিশন কেবল সময় নষ্ট করার একটি উপায়। সুপ্রিম কোর্ট অবমাননা করে রাজ্য সরকার তাদের প্রাপ্য DA দেওয়ার সময়কাল পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

 কনফেডারেশনের রণনীতি:

  • রাজ্য সরকারের নতুন আবেদনের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে, তারা সরাসরি ৪ আগস্টের সুপ্রিম কোর্ট শুনানির দিকে তাকিয়ে। এর ফলে তাদের DA মামলা আবার ঝুলে থাকবে অনেকদিন।
  • আদালত অবমাননার মামলা জোরালোভাবে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। যার ফলে রাজ্যে সরকার চাপে পড়তে চলেছে।
  • কর্মীদের অধিকার আদায়ে শেষপর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

১৬ মে’র নির্দেশ এবং আদালতের কঠোর বার্তা

২০২৫ সালের ১৬ মে, সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস করল স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন:

  • ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে ২৫% বকেয়া ডিএ প্রদান করতে হবে।
  • মামলাটি ৪ আগস্টে “টপ অফ দ্য বোর্ড” হিসাবে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হবে।

এই নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের উচিত ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিএ পরিশোধ করা। কিন্তু কনফেডারেশনের অভিযোগ, রাজ্য সরকার সময় মতো নির্দেশ মানেনি বরং আরও একধাপ এগিয়ে নতুন আবেদন করেছে শুনানি পিছিয়ে দিতে।

কেন পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ?

এই প্রশ্নটাই এখন সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ক্রমশ জোরালো হচ্ছে:
অন্যান্য রাজ্য যখন নিয়মিত ডিএ দিচ্ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন পারছে না?

অন্যান্য রাজ্যের তুলনামূলক চিত্র:

রাজ্যডিএ অবস্থা
রাজস্থানকেন্দ্রীয় হারের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ ডিএ দেয়
পাঞ্জাবনিয়মিত ডিএ প্রদান করে
দিল্লিডিএ বকেয়া নেই
হরিয়ানানিয়মিত ডিএ ও পেনশন দেয়
উত্তরাখণ্ডকেন্দ্রীয় হারে ডিএ প্রদান করে

এই রাজ্যগুলোর অনেকগুলো বিরোধী দল দ্বারা শাসিত হলেও তারা ডিএ দেওয়ায় পিছিয়ে নেই। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকার বছরের পর বছর ধরে ডিএ বকেয়া রেখে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অজুহাতে দায় ঝেড়ে ফেলছে।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা?

ডিএ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীরা আরও বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাজেট বরাদ্দ এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাতেই রয়েছে বড় ধরনের গাফিলতি।

  • শিক্ষাক্ষেত্র বা স্বাস্থ্যখাতের মত প্রয়োজনীয় জায়গায় ব্যয়ের তুলনায়,
  • অনেক সময় “অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়” হয়ে থাকে কোটি কোটি টাকা, যার সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

ডিএ আটকে রাখার জন্য “অর্থের অভাব” দেখিয়ে সরকার যে বক্তব্য দিচ্ছে, তা এখন আর গ্রহণযোগ্য নয় বলেই মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি

কনফেডারেশন সরাসরি জানিয়েছে, যদি ৪ আগস্টের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ডিএ প্রদান না করা হয় এবং আদালত অবমাননার অভিযোগে যথাযথ বিচার না হয়, তাহলে তারা আরও বড় আন্দোলনে নামবে

সম্ভাব্য আন্দোলনের রূপরেখা:

  • রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতি বা অনশন
  • মিছিল ও বিক্ষোভের মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলা
  • সামাজিক মাধ্যমে প্রচার আরও জোরদার করা

বিষয়টি এখন শুধুমাত্র ডিএ নয়

ডিএ মামলাটি এখন কেবলমাত্র একটি ভাতা প্রদান বা অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি হয়ে উঠেছে:

  • ন্যায্য অধিকার বনাম সরকারি প্রতারণা-র লড়াই,
  • একটি নৈতিক এবং সাংবিধানিক প্রশ্ন,
  • যেখানে বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনিক সদিচ্ছা এবং কর্মীদের আশা একসঙ্গে দৌড়চ্ছে।

৪ আগস্টের দিকে তাকিয়ে কর্মীরা

সুপ্রিম কোর্টের ৪ আগস্টের শুনানি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এইদিন হয়তো আদালত অবমাননার প্রশ্নের নিষ্পত্তি হবে এবং রাজ্য সরকারের “প্রতারণামূলক কৌশল” নিয়ে কড়া বার্তা দিতে পারে সর্বোচ্চ আদালত।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার বাড়ছে

DA মামলাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক, টুইটার, টেলিগ্রামসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে কনফেডারেশন ও কর্মীদের পক্ষ থেকে প্রচার বাড়ছে।

  • WBPAY সহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
  • সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সহানুভূতির জোয়ারও চোখে পড়ছে।

রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলাটি এখন আর শুধু কোর্টের ভেতরের একটা কাগজপত্রের খেলা নয়—এটি হয়ে উঠেছে হাজার হাজার কর্মচারীর ন্যায্য পাওনার জন্য মানবিক লড়াই
যেখানে একদিকে সরকারের কৌশল, অন্যদিকে কর্মীদের প্রতিজ্ঞা।
৪ আগস্ট হবে সেই দিন, যেদিন সত্য-মিথ্যার একটি বিচারিক রূপরেখা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সামনে আসবে।

FAQ

পশ্চিমবঙ্গে কত শতাংশ ডিএ বকেয়া রয়েছে?

৪০%-এরও বেশি ডিএ বকেয়া রয়েছে বলে কনফেডারেশনের দাবি।

রাজ্য সরকার কেন ডিএ দিচ্ছে না?

সরকার অর্থনৈতিক সংকট ও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অজুহাত দিচ্ছে, যদিও কনফেডারেশনের মতে এগুলো অবাস্তব।

সুপ্রিম কোর্টের রায় কবে?

আগামী ৪ আগস্ট, ২০২৫ শুনানি নির্ধারিত হয়েছে।

আন্দোলন বন্ধ হচ্ছে না কেন?

কর্মীরা মনে করছেন এটি তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও সুরাহা না পাওয়ায় আন্দোলন জারি রয়েছে।

Leave a Comment