রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে অশান্তি দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, তার অন্যতম বড় অধ্যায় হতে চলেছে আজকের ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা। দীর্ঘদিন ধরে এই মামলাটি সারাদিন রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ, যেখানে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্র রয়েছেন, আজ এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি করবেন। দুপুর ২টোর সময় কোর্ট নম্বর ১১-তে এই মামলাটি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
এই মামলার রায় শুধুমাত্র ৩২ হাজার শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, পাশাপাশি প্রভাব ফেলবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও আইনি দৃষ্টিভঙ্গির উপরেও। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে যার ধরণ রাজ্যে বিরাট ভীষণ খোলার মধ্যে রয়েছে আবার যদি ৩২ হাজার চাকরি বাতিল হয় তাহলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে তলানের দিকে ভেঙে পড়বে।
মামলার পটভূমি
- এই মামলার মূল উৎস ২০১৪ সালের টেট (TET) পরীক্ষাকে ঘিরে।
- ২০১৬ সালে এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।
- পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে—
- নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি।
- সংরক্ষণ নীতি যথাযথভাবে মানা হয়নি।
- মেধাতালিকা নিয়ে অস্পষ্টতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে।
এই সব অভিযোগের ভিত্তিতেই হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই নিয়োগ বাতিলের রায় দেন।
আজকের শুনানির গুরুত্ব
আজকের শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ—
- আদালত আজ হয়তো চূড়ান্ত রায়ে পৌঁছাতে পারে।
- আইনজীবী মহলে আলোচনা চলছে, ২০০৯ সালের একটি নিয়োগ মডেল এই মামলায় রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করা হতে পারে।
২০০৯ সালের মডেলে নিম্ন নম্বর পাওয়া প্রার্থীরাও চাকরি পেয়েছিলেন, ফলে যদি আদালত এই দৃষ্টিকোণ থেকে মামলাটি দেখে, তাহলে ৩২,০০০ জনের চাকরি পুরোপুরি বাতিল হবে না বলেই ধারণা।
আবেদনকারীদের অবস্থান
- মামলাকারীরা সকলের চাকরি বাতিল চান না।
- তাঁরা চান—যাঁরা অযোগ্যভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, শুধুমাত্র তাঁদের বাদ দেওয়া হোক।
- সিনিয়র অ্যাডভোকেট বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য স্পষ্টভাবে আদালতে জানান—
“যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি কেড়ে নেওয়া উচিত নয়। বরং প্রকৃত মেধাবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক।”
পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
RTI বিতর্ক
- নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য জানতে একাধিক RTI আবেদন করা হয়।
- কিন্তু পর্ষদ জেলা স্তরের (DPSC) দপ্তরকে জানিয়েছে—
“আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও নিয়োগ সংক্রান্ত গোপন তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।”
এই পদক্ষেপ স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন বলেই অনেকে মত দিয়েছেন।
পূর্বের ২৬,০০০ চাকরি বাতিলের উদাহরণ
- এই মামলার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ২৬,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের মামলার।
- সেবারও পর্ষদের অসহযোগিতা প্রক্রিয়াটিকে জটিল করেছিল।
- আদালতের পরামর্শ উপেক্ষা করায় প্রভাব পড়ে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর জীবনে।
আজকের শুনানিতে আদালত যদি পর্ষদের আবার একই ধরনের মনোভাব লক্ষ্য করে, তাহলে ফলাফল অনুকূলে নাও হতে পারে।
এই মামলার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
- ৩২ হাজার শিক্ষক মানে প্রায় ১ লাখের বেশি পরিবার এই মামলার উপর নির্ভরশীল।
- রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই শিক্ষক সংকট ও অপর্যাপ্ত নিয়োগ সমস্যায় জর্জরিত।
- যদি আবার একসাথে এত শিক্ষক বরখাস্ত হন—
- প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পাঠদান ব্যাহত হবে।
- ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
- পুনরায় নিয়োগ করতে প্রচুর সময় ও ব্যয় হবে।
এই সমস্ত দিক আদালত যেমন বিবেচনা করছে, তেমনি পর্ষদ ও আবেদনকারী পক্ষেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
মামলাটির সম্ভাব্য রায় ও প্রভাব
সম্ভাব্য ৩টি দিক:
- ✅ চাকরি বাতিল হবে না, তবে যাঁরা অযোগ্য, তাঁদের বাদ দেওয়া হবে।
- ❌ সকলের চাকরি বাতিল হবে এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
- 🟡 আদালত সময় চেয়ে আরও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে।
যেকোনো ক্ষেত্রেই এটি রাজ্যের শিক্ষা নীতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত হতে চলেছে।
চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া
- বহু চাকরিপ্রার্থী আদালতের বাইরে আজ জড়ো হয়েছেন।
- তাঁদের বক্তব্য—
“দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ছাত্রদের পড়াচ্ছি। হঠাৎ করে চাকরি হারালে আমাদের পরিবারের কী হবে?”
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
শিক্ষাবিদ ডঃ অনির্বাণ ঘোষ বলেন—
“এই রায়ের উপর নির্ভর করছে শিক্ষাক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ। আদালত যদি ন্যায়ের ভারসাম্য বজায় রাখে, তাহলে শুধুমাত্র দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীরা বাদ পড়বেন।”
আইনজীবী দেবর্ষি চক্রবর্তী বলেন—
“পর্ষদের উচিত, এই মামলাকে সম্মান করে আদালতের কাজে সহায়তা করা। বারবার গোপনীয়তা দেখিয়ে তথ্য আটকে রাখলে আদালতের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যেতে পারে।”
আজকের শুনানির মূল পয়েন্ট
বিষয় | তথ্য |
---|---|
মামলার শুনানির তারিখ | ১৪ জুলাই ২০২৫ |
আদালত | কলকাতা হাইকোর্ট |
বেঞ্চ | ডিভিশন বেঞ্চ (তপোব্রত চক্রবর্তী ও ঋতব্রত কুমার মিত্র) |
সময় | দুপুর ২টা |
কোর্ট রুম | কোর্ট নম্বর ১১ |
ফলাফল | চাকরি থাকবে কি না, বা আংশিক বাতিল হবে কিনা – তা আজ নির্ধারিত হতে পারে |
৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলা শুধুমাত্র আইনি লড়াই নয়, এটি এক সামাজিক-প্রশাসনিক পরীক্ষাও। আদালতের কাছে প্রত্যাশা, তারা ন্যায় বিচার, স্বচ্ছতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাজ্য সরকারের, পর্ষদের ও আদালতের যৌথ সহযোগিতাতেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।